শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাজেদুল করিম ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. ইসমাইল হোসেনকে শপথবাক্য পাঠ করালেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও শিক্ষার্থী ছাড়াও দেশব্যাপী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে তুমুল সমালোচনা।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন-১ এর কনফারেন্স রুমে এ শপথবাক্য অনুষ্ঠিত হয়।
নবনিযুক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের শপথবাক্য পাঠ করান ছাত্র আন্দোলন নেতা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার সাস্টের সভাপতি পলাশ বখতিয়ার। এ সময় ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আসাদুল্লাহ আল গালিবসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
শপথবাক্যে পড়ানো হয়, ‘শুকরিয়া যে আমরা ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে দীর্ঘ ফ্যাসিবাদী শাসনের করাল গ্রাস থেকে মুক্তি লাভ করেছি। আজ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার পদে যোগদানের মুহূর্তে ২৪ জুলাইয়ের সকল শহীদের সশ্রদ্ধচিত্তে স্বরণ করছি, তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করি। মহান জুলাই বিপ্লবের মূল লক্ষ্য ও আদর্শকে সমুন্নত রাখতে আমরা শপথ করছি যে, বিপ্লবী সরকার কর্তৃক যে দিকনির্দেশনা আমরা পেয়েছি এবং জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার বিপ্লবের স্পিরিট ধারণ করে শাবিপ্রবি ক্যাম্পাসকে শিক্ষার্থীবান্ধব শিক্ষা এবং গবেষণা উন্নয়নে সর্বোচ্চ অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার পক্ষে সচেষ্ট থাকব।’
‘দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতিমুক্ত ও শিক্ষার্থীবান্ধব ক্যাম্পাস গড়ে তোলার জন্য আপসহীনভাবে নিয়োজিত থাকব। আমাদের বিদ্যা, গবেষণা সৎ কাজের মাধ্যমে দেশের প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাবিপ্রবি দেশের জনগণের এবং বিশ্ববাসীকে আলোর পথ দেখাতে যেন অগ্রণী ভূমিকা পালন করে, তা নিশ্চিত করব।’
এদিকে ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মী তথা শিক্ষার্থীরা উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষকে শপথ বাক্য পড়াতে পারেন কি না এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
সজীব সাজ নামে এক শিক্ষার্থী তার ফেসবুকে আইডিতে পোস্টে লেখেন, ‘শাবিপ্রবি সার্কাস বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার মহোদয়কে শপথবাক্য পাঠ করালেন আমাদের মহামান্য সমন্বয়করা। লা জবাব, আপনারা সেরা, আপনাদের দায়িত্ববোধ দেখে আমরা আবেগাপ্লুত।’
এমডি শাহরিয়ার নামে আরেক শিক্ষার্থী ফেসবুকে পোস্টে লেখেন, ‘শাবিপ্রবি প্রো-ভিসি ও ট্রেজারারকে শপথ পাঠ করাচ্ছে। এর থেকে হাস্যকর ও লজ্জাজনক ঘটনা হতেই পারে না! আপনারা তো সৌজন্য সাক্ষাৎ করেও নিজেদের দাবির ব্যাপারে স্যারদের অনুরোধ করতে পারতেন! তাই না?’
আব্দুস সালাম নামে একজন লেখেন, ‘যারা শপথ নিয়েছেন, তাদের মতামতটুকু জানতে খুবই ইচ্ছা করছে! তাদের ব্যক্তিত্ব ও শ্রদ্ধাবোধে কি আছে? তারা কোন প্রেক্ষাপটে বা উদ্দেশ্যে তা করেছেন?’
এ ব্যাপারে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সাজেদুল করিম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এটি পরিকল্পিত কোনো শপথবাক্য পাঠ না। শিক্ষার্থীদের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সভার পরিবেশটি শোকাবহ হয়ে ওঠে। ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় ক্ষোভ, দেশের চলমান ঘটনার প্রেক্ষাপটে ও বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে তাদের উচ্চাশা এবং নতুন প্রশাসন আসায় অতিমাত্রায় আবেগে আপ্লুত হওয়া ইত্যাদির পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এ বাক্যগুলো সবার মুখে উচ্চারিত হয়েছে। ঘটনাটি যেভাবে সমালোচিত হচ্ছে, প্রকৃতপক্ষে এমনটি হয়নি।’
0 Comments